ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::
চকরিয়ার সাহারবিল ইউনিয়নের চৌয়ারফাঁড়ি ও ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের দুটি স্লুইস গেটের কয়েকটি পাটাতন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের সময় লোকালয়ে ঢুকছে সাগরের লবণাক্ত পানি। এতে উপকূলীয় সাহারবিল, পশ্চিম বড় ভেওলা, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর ও ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক কৃষক শঙ্কিত।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন স্লুইস গেটটির যথাযথ তদারকির অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে কৃষকের অভিযোগ।
কৃষক জানান, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ও পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের চৌয়ারফাঁড়ি এবং ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের স্লুইস গেট দুটির কপাট কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকির অভাবে কয়েকবছর ধরে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে স্লুইস গেটের পাটাতনগুলো জং ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। এর ফলে প্রতিবছর কৃষককে এর মাশুল দিতে হচ্ছে। বর্তমানে বিকল হওয়া এসব পাটাতন উঠানামা করতে না পারায় প্রতিনিয়ত সামুদ্রিক জোয়ারের লবণাক্ত পানি ঢুকছে লোকালয়ে। এতে উপজেলার উপকূলীয় এলাকার এসব ইউনিয়নের কয়েক হাজার একর চাষাবাদের জমি লবণাক্ত পানিতে ডুবে যাচ্ছে। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে চাষাবাদ ব্যাহতের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা।
সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মহসিন বাবুল চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘প্রায় দুই যুগ আগে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মিত চিরিঙ্গা-বদরখালী সড়কের চৌয়ারফাঁড়ির স্লুইস গেটের পাটাতন জং ধরে অকেজো হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পাটাতন রোদে শুকিয়ে ও বৃষ্টিতে ভেজার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে।
আগে পানি চলাচল বন্ধ করতে কয়েকটি পাটাতন উঠানামা করা গেলেও বর্তমানে একেবারে অকেজো। এতে গত এক পক্ষকাল ধরে স্লুইস গেট দিয়ে সামুদ্রিক লবণাক্ত পানি বাধা ছাড়াই লোকালয়ে ঢোকছে। লবণাক্ত পানিতে সয়লাব চাষাবাদের জমি। ’
তিনি জানান, লোকালয়ে লবণপানি ঢুকে পড়ায় বর্তমানে সাহারবিল ইউনিয়নের একটি অংশ ছাড়াও উপকূলীয় পূর্ব বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, বিএমচর ও পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নে সবজি এবং আসন্ন বোরো চাষাবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে কৃষকের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। বিষয়টি জনস্বার্থে হওয়ায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোপূর্বে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় উত্থাপন করা হয়েছে।
অপরদিকে ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ঢেমুশিয়া স্লুইস গেটের পাটাতনও নষ্ট হয়ে গেছে বলে চকরিয়া নিউজকে জানিয়েছেন পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন জনপ্রতিনিধিদের সার্বিক সহায়তায় কাদামাটির বাঁধ দিয়ে লবণাক্ত পানির কবল থেকে ক্ষেতের ফসল রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্লুইস গেটের পাটাতনগুলো মেরামত করা না হলে চাষাবাদ করা যাবে না। ’
এসব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা চকরিয়া নিউজকে জানিয়েছেন, উপজেলা পরিষদের সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান অকেজো স্লুইস গেট দুটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন দ্রুত স্লুইস গেট সচল করতে। কিন্তু এখনো কোনো কাজ হয়নি।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাফর আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘নষ্ট স্লুইস গেটগুলো দ্রুততম সময়ে মেরামত করা না হলে কৃষক ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্লুইস গেট সচল করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের তাগাদা দিচ্ছি। আশা করছি বোরো মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই এগুলো সচল হবে। ’
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘চৌয়ারফাঁড়ি ও ঢেমুশিয়া স্লুইস গেটের বিকল হয়ে পড়া পাটাতনগুলো ঠিক করার জন্য পাউবোর যান্ত্রিক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা পরিদর্শন করেছেন। ’
তিনি জানান, পাউবোর কক্সবাজার জোনে ৩৪টি স্লুইস গেট মেরামত করার বিপরীতে এক কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ স্লুইস গেটের অবস্থান চকরিয়ায়। তাই দ্রুত এসব স্লুইস গেট মেরামতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
পাঠকের মতামত: